Travel Tips

সিলেট ঘুরতে চান? কম খরচে সিলেট ঘুরার জন্য টিপস

ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে সিলেট যেতে হবে। ভোরে সিলেট পৌঁছে বেশি কাহিনী করার দরকার নাই। স্মার্টলি হ্যান্ডেল করবেন সবকিছু। সোজা আম্বরখানা চলে যাবেন। গিয়ে নাস্তা করে নেবেন। সময় নষ্ট করবেন না মোটেও। সকল ক্ষেত্রেই মনে রাখবেন আপনি যত বেশি সময় সাজগোজে বা সিএনজি স্ট্যান্ডে কাটাবেন ঠিক ততটুকু সময় আপনাকে নির্ধারিত জায়গায় কম দিতে হবে । যাহোক, নাস্তা শেষে গ্রুপের যেকোন একজন গিয়ে নির্ধারিত টাকায় সিএনজি ঠিক করবেন। রাতারগুল-বিছানাকান্দির জন্য ১৪০০ টাকার ভেতরেই পাবেন। সকল প্রকার দামাদামির ক্ষেত্রে আপনার যে বন্ধু ডিএসএলআর হাতে নিয়ে পোজ দিচ্ছে এবং যার সাজ-পোশাক সুস্পষ্ট আভিজাত্যের পরিচয় বহন করছে তাকে রাখবেন সবার পেছনে। মানুষ যতজনই হোন না কেনো সিএনজি ঠিক করবেন একটা। ভাড়া মিটে গেলে ওনাকে বললে উনি নিজেই আরো সিএনজি ম্যানেজ করে দেবে। আমি যতটুকু দেখেছি, সিলেটের এই সিএনজি চালকেরা অনেকেই বেশ মিষ্টভাষী এবং ভালো লেভেলের ফাউল। কথা দুই করে। ওনাকে খুব ভালো করে আপনাদের প্ল্যান/রুট বলে ওনাকে দিয়ে তা পুনরায় বলিয়ে পারলে সেটা ভিডিও করে রাখবেন। আমি তিনবার সিলেটে গিয়েছি এবং ঠকেছি। তিনবারই সেইম এক্সপেরিয়েন্স। যথাসময়ে রাতারগুল গেলাম। এখানে আমাদের নৌকাভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে ১৪০০টাকা, যা প্রায় মূল খরচের দ্বিগুণ। এখন নাকি ওখানে ভাড়া ফিক্সড করে দিয়েছে। তাহলে তো কোন সমস্যাই নাই। পারলে ভাড়াগুলো সবসময় আগেই জেনে নেবেন। এরপর বিছানাকান্দি গেলাম। আমার পূর্বের পোস্টে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক ছিলো বিছানাকান্দির নৌকা ভাড়া নিয়ে। এতো কমে (৩৫০/-) নাকি এর আগে কেউ বিছানাকান্দি যায় নাই। প্রসঙ্গগত বলছি, বিছানাকান্দি বেড়াতে গিয়ে চালকের বুদ্ধি শুনে অনেক-কেই ঠকতে হয়। বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য ঘাট আছে দুইটা। একটা গোয়াইনঘাট অন্যটি হলো হাদারপাড়া। গোয়াইনঘাট থেকে হাদারপাড়া বেশ ফাঁকে। হাদারপাড়া থেকে বিছানাকান্দি কাছে। চালক চেষ্টা করবে গোয়াইনঘাট নামিয়ে দিতে। গোয়াইনঘাট নামবেন না। সিএনজি নিয়ে সোজা হাদারপাড়া চলে যাবেন। চালক ভূগোল বুঝাতে চেষ্টা করতে পারে। কোন ভূগোলে কান দেবেন না। কারণ ভূগোলে কান দিলেই ধরা খেতে হবে। চালকদের ভূগোল বুঝানোর সিণ্ডিকেট থাকে ওখানে। মিষ্টভাষী পাজির হাড্ডি সব। হাদারপাড়া গেলে ওখানে দেখবেন পর্যাপ্ত নৌকা আছে, যারা আপনাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করবে। টানাপোড়ন পাশ কাটিয়ে যাবেন। ওখানে নৌকা ভাড়া চাইতে পারে ৫০০-৬০০ টাকা। কৌশলে মাঝিদের এভয়েড করে ঘাট থেকে আরো এগিয়ে গেলে দেখবেন খুচরা নৌকা দাঁড়িয়ে থাকে। এসব নৌকা হয় এমনেই থাকে, না হয় মাল বহন করে ঘাটে বেঁধে রেখেছে। আপনি গিয়ে ওদের সাথে কথা বললে এমনিতেই অনেক কম খরচে বিছানাকান্দি থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। আমরা গিয়েছিলাম ছয়জন, ৩৫০ টাকায়। আমাদের ট্রলার টাও ছিলো যথেষ্ট বড়। শুষ্ক মৌসুমে সম্ভবত আরো অনেক রাস্তা পদব্রজে এগিয়ে যাওয়া যায়। তখন হয়তো নৌকা আরো কমে পাওয়া যেতে পারে। নৌকা ভাড়া কম লাগার পেছনে আমার কাছে যে কারণটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেটা হলো, ঘাটে থেকে যে নৌকাগুলো যায় তাদের সম্ভবত ট্যাক্স দিতে হয়। যাহোক, এই ছিলো বিছানাকান্দির রহস্য।

.

এরপরে যথাসময়ে হাদারপাড়া হয়ে সিলেটে ফিরে আসি। একটা বিষয়, আমরা এক সিএনজিতে গিয়েছিলাম ছয়জন। বিছানাকান্দির রাস্তা প্রচুর খারাপ। পাঁচজনের বেশি উঠবেন না এক গাড়িতে।

.

রাতে সিলেটে থাকি। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে টিলাগড় ইকোপার্ক এবং বান্দরটিলা দেখেছি। সিলেট শহরের খুব কাছে ফ্রি টিকেটের এই জায়গা দুইটা অবশ্যই দেখার চেষ্টা করবেন। ভালো লাগবে।

.

তারপর ব্রেকফাস্ট শেষ করে সেদিন আমরা চার বন্ধু জাফলং এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি। সিলেট থেকে জাফলং এর নরমাল ভাড়া ৬৫ টাকা। আমরা দামাদামি করে ৫০ টাকায় জাফলং পৌঁছে যাই। জাফলং এ গিয়ে একটু সচেতন হলেই অনেকগুলো টাকা বাঁচাতে পারবেন। জাফলং এর কাছে দেখার মত আছে জাফলং পয়েন্ট, মায়াবী ঝর্ণা সংগ্রামপুঞ্জি এবং খাসিয়া পল্লী। বর্ষা মৌসুমে এসব দেখতে নৌকা আবশ্যিক। এখানেও সিণ্ডিকেট আছে, আছে ভূগোল বোঝানোর লেকচারার। তারা আপনাকে বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করবে। তাদের উপস্থাপনা টা হয় এমন যে, জাফলং ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করলে সেটা ডাউকি ব্রীজ হয়ে সংগ্রামপুঞ্জি ঝরণা হয়ে নামিয়ে দেবে খাসিয়াপল্লী। সেখানে ওদের ঠিক করা গাড়ি আপনাকে পল্লী ঘুরিয়ে দেখাবে। সেই খাসিয়াপল্লীতে দেখাবে পানের বরজ, চা বাগান এবং রাজার বাড়ি। এমন ভাবে উপস্থাপন করে যে কত কি দেখাবে। আসলে কিছুই না। সব এক জায়গাতেই।

এসব প্যাকেজ পারলে দেখবেনই না। আপনি ইকোনমি ক্লাসের ট্রাভেলার। এটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ঘাটে গিয়ে সাধারণ নৌকা নেবেন। আপনারা সংখ্যায় কম হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আরো কয়েকজন আপনাদের মত ট্রাভেলারকে সাথে নিয়ে নৌকা শেয়ার করবেন। এতে খরচ সাশ্রয় হবে। আমরা এমনই করেছি। নৌকার মাঝির সাথে আমাদের ডিল ছিলো ডাউকি ব্রীজ হয়ে(ব্রীজটা দেখানোর কথা বললেও আসলে কেউই কাছে যায় না। ওটা ইন্ডিয়ার ভেতরে। হুদাই নাম টা বলে টাকার ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করে। বেটার আপনারা আগেই বলে নেবেন যে ওই ব্রীজ দেখবেন না। ) , সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা হয়ে খাসিয়াপল্লী তে নামিয়ে দেবে। সাতজনে (তিনজন বাইরের) নৌকা ভাড়া নিলো ৫০০ টাকা। এটা কমেই ছিলো। এরপরে আমরা পানের বরজ, চা বাগান, খাসিয়া রাজার বাড়ি দেখলাম কিছুটা পায়ে হেঁটে, কিছুটা অটোতে চড়ে। আমার কাছে এই পল্লীটা খুবই ভালো লেগেছে। ছবির মত সুন্দর। কি সুবিশাল পানের বরজ, পানের বরজের বুক চিড়ে সুন্দর পাকা রাস্তা। দিগন্ত বিস্তৃত চা বাগান টাও অনেক সুন্দর। পয়েন্ট টু বি নোটেড, চা বাগানের পাশে ইন্ডিয়ার চোরাই পণ্য বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের বিস্কিট, সাবান, শ্যাম্পু তথা অনেক জিনিস স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে। পণ্য না চিনলে লোভের বশবর্তী হয়ে ভুলেও সেসব কিনবেন না। বেশিরভাগই ভূয়া। যাহোক, সব বেড়ানো শেষে সেই পল্লীর আরেকটা ঘাট দিয়ে দশ টাকা নৌকা ভাড়ায় জাফলং বাজারে ফিরে আসি।

আপনারা যেটা করতে পারেন সেটা হলো আমরা যেভাবে গিয়েছি আপনারা ঠিক তার উল্টা রুট ফলো করবেন। নেক্সট টাইম গেলে আমরাও তাই করবো। এতে যা দেখার তাই দেখবেন, মাঝখানে থেকে খরচ কিছু কম হবে এবং স্বাধীনতা কিছু বেশি পাবেন । প্রথমে জাফলং বাজার সংলগ্ন সেই ঘাট থেকে ১০ টাকায় খাসিয়াপল্লী যাবেন। সেখানে সব দেখে চলে যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায়। গোছল শেষে যেকোন ফিরতি নৌকায় উঠে সরাসরি জাফলং চলে আসবেন। সব ঘাটেই নৌকা পর্যাপ্ত থাকে। ভাড়াগুলো এক্স্যাক্ট না। যার কাছে যা পারে নেয়। সকল দূরত্বই খুব স্বল্প। আমার লেখা পড়ে অনেক কিছু বুঝতে প্রবলেম হতে পারে। তবে ওখানে গেলে এমনিতেই বুঝতে পারবেন। তারপর সব শেষে সিলেট আসবেন।

 

 

.

সিলেট থেকে ঢাকায় আসবেন ট্রেনে। তবে ট্রেন মিস হওয়া বা সিট না পাওয়া বিচিত্র কিছু না। সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা বাস। বাসের তিনটা শ্রেণি আছে। আপনি যেহেতু হিসেবি লোক, সেহেতু ভালো গাড়িগুলো (যেমন – শ্যামলী) এড়িয়ে যাবেন। এদের ভাড়া সম্ভবত ৫০০ টাকা। এরপর আছে দুইটা গাড়ি – আল মোবারক এবং মামুন পরিবহন। এদের সার্ভিস যথেষ্ট ভালো। তবে ভাড়া ৩৫০ টাকা। আমরা এটাতেই এসেছি। আপনার সাধ্য যদি আরো কম থাকে তাহলে আপনি মিতালি পরিবহনের মত খুচরা পরিবহন পাবেন বাস স্ট্যান্ডে। যেগুলোর ভাড়া ১০০ থেকে যার কাছে যা নিতে পারে। সার্ভিসও হ য ব র ল।

.

.

আমার ভ্রমণ তালিকা নিয়ে বিতর্কিত কিছু পয়েন্ট –

  • খাবার খরচ – ভাই আমরা এক রাত আর দুই দিনে প্রায় ৩১৬ টাকা খেয়েছি জনপ্রতি। সিলেটের খাবার মূল্য খুব কম। সেখানে ৩১৬ টাকার আহার্য যৎসামান্য হবার কথা নয়। আবার পাঁচ ভাই হোটেলে খাবো বলে ৩০ টাকা সিএনজি ভাড়াও দিতে হয়েছে। সব হিসাব তালিকায় দেয়া আছে।

.

  • সদস্য সংখ্যা বিভ্রান্তি – আমাদের সাথে একেক সময় একেকজন জয়েন করেছে। তাই মোট সংখ্যা টা বিভিন্ন সময় আলাদা আলাদা ছিলো। সেখান থেকে একক হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে।

.

  • হোটেল ভাড়া –

রাতে আমরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক বন্ধুর হলে ছিলাম। সুতরাং কোন আবাসন খরচ ছিলো না। আপনাদের পরিচিত কেউ না থাকলে স্বল্প মূল্যের হোটেল খুঁজে নিতে পারেন।

.

.

*** আবারো অনুরোধ রইলো যাদের যে বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই তারা দয়া করে সেই বিষয়ে হুট করেই oppose করে বসবেন না। আপনাদের সকলের ভ্রমণ সুন্দর, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব হোক – সেই প্রত্যাশা রইলো।

 

Post Collected From:

Travlers of Bangladesh

1 thought on “সিলেট ঘুরতে চান? কম খরচে সিলেট ঘুরার জন্য টিপস”

  1. ধন্যবাদ। খুব ভালো লিখেছেন।

    কোরা থেকে আপনার ব্লগ এ এসেছি।

    Like

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.